এই প্রশ্নের উত্তরটা একটু জটিল তাই এক কথায় দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। আসুন একটু বুঝিয়ে বলি।
প্রথমেই বলে রাখি ব্যাবসা, চাকরি, ফ্রিল্যান্সিং সকল ক্যারিয়ার এর সফলতা, সাস্টেনিবিলিটি নির্ভর করে ব্যাক্তিভেদে। একজন মানুষ তার ক্যারিয়ার এ কতটুকু সফল হবে এবং সেই সফলতা কতদিন ধরে রাখতে পারবে এটা তার টেকনিক্যাল বা ওয়ার্ক স্কিল এর ওপর নির্ভর করে 40% আর ব্যাক্তিগত গুণাবলীর ওপর নির্ভর করে 60% (পরিসংখ্যানটি গুরুত্ব বুঝানোর স্বার্থে বললাম)। এখন একজন সফটওয়্যার উদ্যোক্তা ভাইয়ের সাথে একজন ফ্রিল্যান্সার ভাইয়ের কথাবার্তার দুইটা স্ক্রিনশট দিচ্ছি পড়ে নিন।
লক্ষ্য করুন প্রথম স্ক্রিনশটে একজন উদ্যোক্তা 2020 সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনেই একজনকে নূন্যতম বেতনে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিল। জয়েন করে সামনে আগানোর পরে নিশ্চয় বেতন বাড়তো। কিন্তু এই চাকরির প্রস্তাবের উত্তরে খুব অহংকারী ভাবে সেই ভাই তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। যদিও এটা অন্যভাবেও প্রত্যাখ্যান করা যেত বা নেগশিয়েশনে আশা যেত। কিন্তু উনি Upwork থেকে ৩ দিনে পুরো মাসের বেতনের টাকা আয় করতে পারবেন এমন একটি দাম্ভিকতা দেখিয়ে রিজেক্ট করে দেন।
তার দুই বছর পরে 2022 সালের সেপ্টেম্বর মাসের কোন এক বুধবারে চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা সেই ভাইটি উদ্যোক্তা ভাইটিকে আবারো মেসেজ দিয়ে প্রজেক্ট ভিত্তিক কাজ করতে চান এবং জানান যে উনার Upwork প্রোফাইলটি সাসপেন্ড হয়ে গেছে।
এ থেকে কি প্রমাণিত হয়? ফ্রিল্যান্সিং কোন নির্ভরযগ্য ক্যারিয়ার না? বিষয়টি আসলে তেমন নয়। ফ্রিল্যান্সিং বলতে শুধু মার্কেটপ্লেসে কাজ করাকে বোঝায় না। ফ্রিল্যান্সিং কথার ব্যাপকতা সম্বন্ধে আরেকটা পোস্টে আলোচনা করবো। কিন্তু মূল ব্যাপার হচ্ছে আপনার কখনোই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের ওপর শতভাগ ভরসা করাটা ঠিক হবেনা।
প্রত্যেক ফ্রিল্যান্সারের উচিৎ, শুরুটা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লসে থেকে হলেও প্রথম 2-5 বছর সেখানে ফোকাস করে ক্যারিয়ারের ভিত মজবুত করার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত শিখতে থাকা এবং নিজের দক্ষতাকে বাড়িয়ে নেওয়া। এরপর ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের পাশাপাশি যে সার্ভিসটি দিচ্ছেন সেই সার্ভিস দেওয়ার জন্য নিজের ওয়েবসাইট করে নিজের এজেন্সি গড়ে তোলা এবং নিজের সার্ভিসের মার্কেটিং নিজে করে কাজ আনা। তাহলে আপনাকে কখনোই সম্পূর্নভাবে কোন মার্কেটপ্লেসের ওপর ভরসা করতে হবেনা। মার্কেটপ্লেসে যেকোন সময় একটা সমস্যা হয়ে গেলে অন্তত আপনার ‘Plan B’ রেডি থাকবে।
ফ্রিল্যান্সিং করার সময় আমরা কাঁচা টাকা ইনকাম করি। নগদ অর্থ হাতে পাবার আগেই অনেক সময় পরিকল্পনা হয়ে যায় যে এই টাকা কি কি ভাবে খরচ করবো। বাইক কিনবো, নাকি ক্যামেরা কিনবো, নাকি আইফোন কিনবো, না ঘুরতে যাবো। কোনটা ছেড়ে কোনটা করি হুঁশ পাইনা। কিন্তু আমাদের উচিৎ এই সময়টায় সীমিত খরচ করে কোন একটা ব্যবসা গড়ে তোলা, বা উদ্যোক্তা হওয়া, অথবা নিজের এজেন্সি গড়ে তোলার জন্য ইনভেস্ট করা। মোট কথা কাজ পাওয়ার দ্বিতীয় সোর্স রেডি করা। এবং মার্কেপ্লেসের বাহিরে ক্লায়েন্ট ধরতে শেখা। সেটাও কিন্তু একধরনের ফ্রিল্যান্সিং। শুধু মার্কেটপ্লেসে কাজ করায় ফ্রিল্যান্সিং না।
সবশেষে আবার একটু মনে করিয়ে দিতে চাই যে, প্রফেশনাল কাজের স্কিলের পাশাপাশি ব্যাক্তিগত গুনাবলির গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যাক্তিগত গুণাবলির মধ্যে অহংকার না করা, সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারা, মিতব্যায়ি হয়ে মুনাফা জমিয়ে বিনিয়োগমুখি হওয়া, মিনিংলেস কাজে টাকা কম খরচ করে যেখানে খরচ করা দোরকার সেখানে করা, আইফোন কিনে নিজের ভাব না বাড়িয়ে আগে নিজের মস্তিষ্কের ওপর বিনিয়োগ করা। এগুলো প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই থাকা উচিৎ। তবেই সে জীবনে সফল হতে পারবে। ভালো কিছু করতে পারবে। এবং সেই সফলতাকে ধরে রাখতে পারবে। আর তা না থাকলে ফ্রিল্যান্সিং বলেন, চাকরি বলেন, ব্যবসায় বলেন আর দুনিয়ার যেই পেশায় বলেন, কোন কিছুতেই সফলতা দীর্ঘস্থায়ি হবেনা। কোন কিছুই টিকবেনা।
তাই ফ্রিল্যান্সিং ভরসাযোগ্য ক্যারিয়ার কিনা এই প্রশ্ন না করে নিজেকে প্রশ্ন করুন যেঃ “আপনার ব্যাক্তিত্য এবং আপনার নফস ভরসা যোগ্য তো?”
Because the journey of success and prosperity starts with your personality.